
আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির বাঁধন
স্টাফ রিপোর্টারঃ
রাজশাহীতে ‘ভাইয়া কোচিং বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরি
রাজশাহীতে লাগামহীন কোচিং বাণিজ্য ভাইয়া গ্রুপের কারণে শিক্ষার মান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে—এমন অভিযোগ তুলেছেন অভিভাবক ও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সোমবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজশাহী কলেজের শিক্ষক মিলনায়তনে ‘শিক্ষার পরিবেশ ও মান উন্নয়নে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলা হয়। শিক্ষার পরিবেশ ও মান উন্নয়নের দাবিতে এই সভার আয়োজন করে শিক্ষা সুরক্ষা কমিটি রাজশাহী।
বক্তারা অভিযোগ করেন, শহরের অধিকাংশ কোচিং সেন্টার শিক্ষাকে সেবা হিসেবে না দেখে মুনাফাকেন্দ্রিক ব্যবসা হিসেবে পরিচালনা করছে। কোথাও ৫০ থেকে ২০০ শিক্ষার্থী নিয়ে একই ক্লাস চলছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অনেকে ১৫–২০ জনের ব্যাচের কথা বললেও বাস্তবে ব্যাচের আকার অনেক বড়। এতে প্রত্যাশিত শিক্ষার মান পাওয়া যাচ্ছে না।
অভিভাবকদের অভিযোগ, কোর্স ফি অযৌক্তিকভাবে বাড়ানো হচ্ছে; কোথাও কোথাও ৩ মাসের কোর্সের নামে অগ্রিম ১২ মাসের টাকা নেওয়া হলেও ক্লাস হয় মাত্র ৮ মাস। শিক্ষার্থীদের প্রতি সুনজর না থাকায় ফলাফলও আশানুরূপ হয় না। ‘ভাইয়া গ্রুপ’ নামে পরিচিত অননুমোদিত শিক্ষকরা নানা স্থানে ব্যাচ পরিচালনা করে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করছে।
সভায় উপস্থিত অভিভাবকরা ২০১১ সালের রিট পিটিশন ও ২০১২ সালের ২০ জুনের গেজেট নোটিফিকেশনের বিষয়ও স্মরণ করিয়ে দেন। এতে বাসা বা বাড়িতে কোচিং কেন্দ্র চালানো নিষিদ্ধ এবং অনুমোদিত কোচিং সেন্টারে ব্যাচপ্রতি সর্বোচ্চ ৪০ জন শিক্ষার্থী রাখার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কোথাও এ নিয়ম মানা হচ্ছে না।
অভিভাবকরা কোচিং ফি বাতিল করে মাসিক সহনশীল ফি নির্ধারণ, ব্যাচের আকার কমানো এবং অনিয়ম রোধে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি দাবি করেন।
সভায় বক্তারা বলেন,“শিক্ষা বাণিজ্যিকীকরণ হলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ বিপন্ন হবে। কোচিং নির্ভরতা বাড়লে স্কুলশিক্ষা অকার্যকর হয়ে পড়বে। এখনই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।”
সভায় রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মু. যহুর আলীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ। রাজশাহী প্রেসক্লাব ও ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম মোস্তাফা মামুনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আ.ন.ম মোফাখখারুল ইসলাম, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর মোহা. আছাদুজ্জামান। আরও বক্তব্য রাখেন- রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো. আরিফুল ইসলাম, মাউসর রাজশাহী অঞ্চলের উপ-পরিচালক প্রফেসর উমর ফারুক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রফেসর ড. মুহাম্মদ নেছার উদ্দিন, মেট্রোপলিটন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুকুমার সরকার, সিরোইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিকাশ চন্দ্র মন্ডল, রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. ইলিয়াছ উদ্দিন, শাহমখদুম কলেজের অধ্যক্ষ এসএম রেজাউল ইসলাম, রাজশাহী মহানগরের এনসিপির সভাপতি মোবাশ্বের আলী। সভায় বিপুলসংখ্যক অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এই সময় উপস্থিত ছিলেন প্রেস ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দরা।