
‘যেখানে খেলা সেখানেই নিয়ম-শৃঙ্খলা, পরিশ্রম-অধ্যবসয়,ধৈর্য আর সহযোগিতা-
খেলায় থাকে আনন্দ,কাজ হয় নির্ভয় ও স্বকীয়তায়, শিশুর অন্তর বিকশিত হয়।”
আনন্দ কোন সময় কাটানো নয় আনন্দ হচ্ছে শিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছাকে প্রভাব বিস্তারকারী সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম।আনন্দের প্রকাশ খেলা আর আনন্দ হলো শিক্ষার ভিত্তি ।
শিশুশিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল অক্ষরজ্ঞান নয়, বরং মন, বুদ্ধি, চরিত্র ও মানবিকতার বিকাশ।এই বিকাশের প্রাণশক্তি হলো আনন্দ, আর তার গতিশক্তি হলো খেলা। শিশুর প্রধান বৈশিষ্ট্য সে চঞ্চল, গতিশীল, এবং কল্পনা প্রিয়। শিশুর মনে যার দ্বারা স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দ জাগে সেটিই শিক্ষার আসল প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। যেখানে আনন্দ আছে সেখানে জ্ঞান অনুপ্রবেশ করে সহজে; আর যেখানে জবরদস্তি বা ভয় আছে, সেখানে শেখার দরজা বন্ধ হয়ে যায়।শিশু ভয় মুক্ত বা আত্মবিশ্বাসী হলেই আনন্দ পায়। যখন শিশু ভয়হীন ভাবে খেলতে পারে ভুল করে করে শিশু এগিয়ে যায়। প্রচেষ্টা ও ভুল করা এবং শিক্ষা একটি অপরটির পরিপূরক।
শিক্ষাবিজ্ঞানীগণ বলেছেন, —শিক্ষা হতে হবে শিশুর স্বাভাবিক প্রবৃত্তির বিকাশ, জোর করে চাপিয়ে দেওয়া নয়। আধুনিক মনোবিজ্ঞানও জানায়, শিশুর শেখার ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে তখনই, যখন সে আনন্দে নিমগ্ন থাকে।
অর্থাৎ, আনন্দ শিশুশিক্ষার আত্মা বা প্রান —এটি শেখার প্রতি আকর্ষণ, মনোযোগ ও কৌতূহল তৈরি করে। আর খেলা সেই আনন্দকে বাস্তবে রূপ দেয়; কারণ খেলাই শিশুর সবচেয়ে স্বাভাবিক শেখার মাধ্যম।
শিশু সবকিছুকে খেলার মধ্যে নিতে চায় সে লেখাপড়াকে যদি খেলার বৈশিষ্ট্যে পায় তাহলে লেখাপড়াকে সে খেলা মনে করেই বা শিখতে পারে। লেখাপড়াকে শাস্তি হিসেবে গ্রহণ না করে এটা খেলা হিসেবে গ্রহণ করলে শিক্ষাটা আনন্দময় হয়।
খেলা হলো আনন্দের বাহন, আর আনন্দ হলো শিক্ষার চালিকা শক্তি। খেলার মাধ্যমে শিশুরা ভাষা শেখে, চিন্তাশক্তি বাড়ায়, সমস্যা সমাধান করতে শেখে এবং সামাজিক আচরণের অনুশীলন করে। যখন শিক্ষা খেলাধুলার সঙ্গে মিশে যায়, তখন তা হয়ে ওঠে জীবন্ত ও অর্থবহ।কিন্ডারগার্ডেন স্কুলের প্রবর্তক জার্মান দার্শনিক ,
শিক্ষাবিদ ফ্রোবেল বলেছেন—“Play is the highest expression of human development in childhood.” অর্থাৎ, খেলা শিশুর বিকাশের সর্বোচ্চ প্রকাশ।
খেলা ও আনন্দ শিশু শিক্ষার দুটি অবিচ্ছেদ্য উপাদান।
আনন্দ হলো শিশুশিক্ষার প্রাণ, খেলা তার প্রেরণা।
লেখক :শিক্ষক ও সাংবাদিক,,, এম নজরুল ইসলাম খান